নিজেস্ব প্রতিবেদন, উলুবেড়িয়া: দীর্ঘদিন ধরে খানা খণ্ডে বেহাল অবস্থায় পরে আছে উলুবেড়িয়া-২ নম্বর ব্লকের রঘুদেবপুর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কেটুয়াপোল থেকে বেলকুলাই সিকেএসি বিদ্যাপীঠ পর্যন্ত যাবার ১.৫ কিলোমিটারের দামোদর দাস রোডটি। এদিকে গত দুই দিনের বৃষ্টিতে আরও বেহাল হয়ে পড়েছে সেই রাস্তার অবস্থা। ফলত সমস্যায় পড়ছে সাধারণ মানুষ থেকে মিল, কারখানার শ্রমিকরা। স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রী থেকে শুরু করে মুমূর্ষু রোগী বহনকারী এম্বুলেন্স সহ অন্যান্য গাড়ির চালককেরা। যেকোনো সময়ে এই রাস্তার কারণে ঘটে যেতে পারে ছোট, বড় দুর্ঘটনা।
আর এই বেহাল রাস্তা সম্পর্কেই শনিবার আমরা কথা বলেছিলাম এই রাস্তার উপর দিয়ে চলাচলকরি সাধারণ মানুষ থেকে টোটো ও গাড়ির চালকদের সঙ্গে। আর এই বেহাল রাস্তা প্রসঙ্গেই এদিন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক টোটো যাত্রী বলেন, যদি কোন অন্তঃসত্বা মহিলাকে এই রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় প্রসবের জন্য। তবে হাসপাতালে যাবার আগেই রাস্তার এই বেহাল অবস্থার কারণে এই রাস্তাতেই প্রসব করে ফেলবেন তিনি। শুধু তাই নয় এই রাস্তাটি যাতে দ্রুত সংস্কার করা হয় তার জন্যেও তিনি আবেদন করেন প্রশাসনের কাছে।
আর এই রাস্তা প্রসঙ্গেই এদিন পথ বাইক আরোহী বাপি মল্লিক বললেন, দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল এই রাস্তাটি। রাস্তার উপরে এতটাই জল জমে আছে যে তাতে সাঁতার কেটে যাবার সময়। পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, এই রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় থাকলেও তা সংস্কারের কোন হেলদোল নেই প্রশাসনের। পাশাপাশি তিনি এই রাস্তাটি দ্রুত যাতে সংস্কার হয় তার জন্য আবেদন জানান প্রশাসনের কাছে।
অন্যদিকে এই রাস্তার উপর চলাচলকারি এক টোটো চালক বলেন, রাস্তাটি এতটাই খারাপ হয়ে গেছে যে তাদের গাড়ি চালাতে খুব সমস্যা হচ্ছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের গাড়িও। শুধু তাই নয় যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে ছোট বর নানা ধরনের দুর্ঘটনা। তাই রাস্তাটি যাতে দ্রুত সংস্কার হয় তার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন তিনি।
অন্য দিকে এই রাস্তা প্রসঙ্গে উলুবেড়িয়া-২ ব্লক কমিটির সিপিআইএম নেতা সাম্য পাড়ুই বলেন, বামফ্রন্ট সরকারের আমলে এই রাস্তা নির্মাণ করা হয়। পরে দীর্ঘদিন কেটে গেলেও মাঝে একবার রিপিয়ার ছাড়া আর কিছুই হয়নি। পাশাপাশি তিনি আরো বলেন, এই রাস্তার উপর দিয়েই বেলকুলাই হাই স্কুলের ছাত্র ছাত্রী থেকে বহু শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ নিত্যদিন যাতয়াত করে। ফলে সমস্যার মধ্যে দিয়েই তাদের নিত্যদিনের পথ চলতে হচ্ছে তাদের। পাশাপাশি তিনি জানান, ভোরের দিকে এই রাস্তার উপর দিয়ে চলাচল করে বেশকিছু ইমারতি দ্রব্যের গাড়ি। আর সেই দিকেই তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। অন্যদিকে প্রশাসনের কাছে তিনি এই রাস্তা সংস্কারের দাবি জানান। আর তা না হলে আগামী দিনে তারা আরও বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে এই রাস্তা প্রসঙ্গেই শনিবার শাসকদলের নেতা তথা রঘুদেবপুর পঞ্চায়েতের উপ প্রধান শেখ জুবের আলম বলেন, এই রাস্তাটি ২০১৮ সালে নতুন করে হয়। কিন্তু মাত্র চার বছরের মধ্যে সাধারণত রাস্তা খারাপ হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এই রাস্তায় গভীর রাতে বা ভোর রাতে বেশকিছু বিল্ডার্সের ইমারতি দ্রব্য ঢোকে। যা এই রাস্তাটি খারাপ হওয়ার জন্য দায়ী। কারণ এই রাস্তার ক্ষমতা ১০ টনের, তাই ওভার লোডিং এর পিছনে অনেক অংশেই দায়ী। অন্যদিকে তিনি বলেন, এই ওভেরলোডিং এর বিষয়ে প্রশাসন নজর রাখছেন। অন্যদিকে রাস্তা সংস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, কেটুয়াপোল থেকে বেলকুলাই সিকেএসি বিদ্যাপীঠ যাবার এই রাস্তার প্রসেস প্রক্রিয়া হয়ে তা জেলা পরিষদে পৌঁছে গেছে। খুব দ্রুত এই রাস্তার কাজ শুরু হবে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে তিনি আরো বলেন, রাস্তা খারাপ হবার আরো একটা মেজর কারণ তা হলো গত বছরে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, তা গত ৭০ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। আর সেই অতি বৃষ্টির কারণে গত বছর এই রাস্তার বেশিরভাগ অংশই জলের তলায় ছিল। যে কারণেই এই রাস্তাটি আরো বেশি তাড়াতাড়ি খারাপ হয়ে গেল। অন্যদিকে তিনি বলেন, রঘুদেবপুর গ্রাম পঞ্চায়েত বিগত দিনে বাম, কংগ্রেস, বিজেপি একত্রে জোট বেঁধে শাসন কার্য চালিয়েছে। নিকাশি ব্যবস্থার কোন রূপরেখা তৈরি না করে তারা যথেচ্ছভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো ইন্ডাস্ট্রিগুলো কে এন ও সি দিয়েছে। যার জেরে নিকাশি ব্যবস্থার অবনতি হয়েছে। আর সেই অবনতির ফলেই। এই এলাকার রাস্তা গুলোর উপরে জল জমে থাকার সব থেকে বড় কারণ। তিনি আরো বলেন, রঘুদেবপুর গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূল কংগ্রেস এই চার বছর ক্ষমতায় এসেছে। আর তার মধ্যেই আমরা উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের নিয়ে নিকাশি ব্যবস্থার জন্য দফায় দফায় বৈঠক করেছি। যেখানে আমরা রূপরেখা তৈরি করেছি নিকাশি ব্যাবস্থার। আর খুব শীঘ্রই নিকাশি ব্যবস্থার কাজেও হাত লাগানো হবে বলে জানান তিনি। আর সেই কাজেরই দ্রুত সুফল পাবে রঘুদেবপুরবাসী বলে এদিন আশা প্রকাশ করেন তিনি।