BREAKING

Thursday, 4 August 2022

নদী এখন সমস্যার কারণ পাঁচলাবাসীর


নিজেস্ব প্রতিনিধি, অজানা বাংলা, হাওড়া: যে নদী একদিন দিয়েছিল মানুষকে জীবন জীবিকা, আজ সেই নদীই সমস্যার কারণ পাঁচলাবাসীর। পাঁচলার জলা বিশ্বনাথপুর, বনহরিশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় দশটি গ্রামের ১৫ থেকে ১৬ হাজার মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে এই নদী। মূলত পাঁচলার এই দুই গ্রাম পঞ্চায়েত ছাড়াও নস্করপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশকিছু অংশের উপর দিয়ে বয়ে গেছে কৌশিকি নদী যা স্থানীয়দের কাছে কানা নদী নামেই পরিচিত।

কিন্তু কি ভাবে এই নদী মানুষের জীবনে অভিশাপ ডেকে আনলো, একদা যে নদীর জলে মানুষ স্নান করতো, জীবন জীবকা চালাতো এমনকি প্রাণও করতো আজ সেই নদীর জলই পাঁচলার জলা বিশ্বনাথপুর, বনহরিশপুর এলাকার মানুষের কাছে হয়ে উঠেছে সমস্যার কারণ। কারণ এই কৌশিকি নদীর জল এখন ব্যাবহারের অনুপযুক্ত। দূষণের ফলে জলের রং হয়েছে কালো। এই জল এখন প্রাণ করতো দুরহস্ত নদীর জলে নামলেই হচ্ছে নানা ধরনের চর্ম রোগ। এমনটাই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি যে নদীর জল একদা তাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল অঙ্গাঙ্গিক ভাবে। আজ সেই নদীর জলই তাদের মাথা ব্যাথার কারণ।

এলাকাবাসীদের দাবি কারখানার রাসায়নিক জল কৌশিকি বা কানা নদীতে মিশে দূষিত হয়েছে নদীর জল। যে জলে পা দিলে দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের চর্ম রোগ। শুধু তাই নয় নদীর জল দিয়ে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, ফলে নষ্ট হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। পাশাপাশি তারা আরও বলেন, স্থানীয় প্রশাসনকে বার বার বলেও নদী সংস্কারের কোন উদ্যোগী হয়নি বলে দাবি তাদের

অন্যদিকে ওই এলাকা সহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রাম গড়ে উঠেছে ওই কৌশিকি নদীকে কেন্দ্র করে। পাশাপাশি যে নদীর জল একসময় কৃষকরা ব্যাবহার করতো ক্ষেতে। ব্যাবহার করতো গবাদি পশু পালনে। আজ এলাকার মানুষ সেই নদীর জল চাষের জমিতে দিতেও ভয় পায়। পাশাপাশি নদীর দুই পাড়ের গ্রামবাসীরা বলেন, নদীর দূষণের ফলে যে দুর্গন্ধ ছড়ায় তার জেরে গ্রামবাসীদের বাড়ি আসেনা কোন আত্মীয়।

কিন্তু কাদের গোপন আঁতাতে আজ দূষণের কবলে এই নদী। এনিয়ে স্থানীয় জলা বিশ্বনাথপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আসলাম মোল্লাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, শুনেছি হুগলির কোন এক জায়গায় বেশ কয়েকটি কারখানার দূষিত জল মিশছে এই কৌশিকি নদীতে। আর তার পর থেকেই এই নদীর এই অবস্থা। তিনি আরো বলেন, নদীর সমস্যার কথা তিনি জানিয়েছেন পাঁচলার সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিককে। কিন্তু হয়নি কোন সমাধান।

এদিকে এই নদী থেকে দূষিত হতে পারে ভাগীরথী হুগলি নদীও। কারণ এই কৌশিকী বা কানা নদীর উৎপত্তিস্থল খুঁজতে গিয়ে বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় বর্তমানে পশ্চিম বর্ধমান জেলার জামালপুরের কাছে সেলিমাবাদ অঞ্চল থেকে দামোদর নদের একটি শাখা নদী কৌশিকীর উৎপত্তি। আর এখান থেকেই কৌশিকী বা কানা নদীর জলপ্রবাহ দক্ষিণ মুখে অর্থাৎ হাওড়ার দিকে প্রবাহিত হয়েছে।

জানা যায় বর্ধমান জেলার হিরণ্যগ্রাম, বাহাদুরপুর, খাঁপুর অতিক্রম করে ওই নদী প্রবেশ করেছে হুগলি জেলায় বলাগড়ে, সেখান থেকে তা দশঘরা, তারকেশ্বর, জাঙ্গীপাড়া হয়ে তা প্রবেশ করেছে হাওড়ায়। এরপর জগৎবল্লভপুরের নাইকুলি, মাজু হয়ে হয়ে প্রবেশ করেছে পাঁচলা ব্লকের লস্করপুর, বনহরিশপুর, জলা বিশ্বনাথপুরের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত হয়ে উলুবেড়িয়া- ফুলেশ্বরের কাছে সিজবেড়িয়া খাল দিয়ে তা প্রবেশ করেছে গঙ্গাবক্ষে। আর এই কৌশিকী নদীর জলের দূষণ যদি আরো বাড়তে থাকে তা হলে সেই নদী ভাগীরথীতে পড়ার কারণে দূষিত হবে ভাগীরথী হুগলি নদীর জল।

এদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি সংশ্লিষ্ট দপ্তর দ্রুত ব্যাবস্থা গ্রহণ করুক। এই নদীর জল দূষণ রোধ করতে। তাতে করে হয়তো আগামী দিনে পাঁচলাবাসীর জীবন যাত্রার প্রধান কেন্দ্র বিন্দু হয়ে উঠবে এই কৌশিকী বা কানা নদী।