BREAKING

Friday, 3 December 2021

জন্মদিনে শহীদ ক্ষুদিরাম বসু

বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা ডিসেম্বর আধুনা মেদিনীপুর জেলার হাবিবপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা ছিলেন ত্রৈলোক্যনাথ বসু ও মা লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী। এদের দুই পুত্রের শৈশবে মৃত্যু হয়, আর তার পরেই জন্ম গ্রহণ করেন ক্ষুদিরাম বসু।  আর তাই তিনকন্যার পর যখন তাঁর জন্ম হয়, তখন পরিজনের কথা শুনে, মা লক্ষিপ্রিয়া দেবী তার বড় বোনের কাছে তিন মুঠো খুদের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন ছোট্ট ক্ষুদিরামকে। যেহেতু খুদের বিনিময়ে শিশুটিকে নেওয়া হয় তাই তার নাম রাখা হয় ক্ষুদিরাম।

এদিকে ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর পিতা  ত্রৈলোক্যনাথ বসু এবং মা লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবীর মৃত্যু হয়। আর তার পর তার দায়িত্ব নেন তার বড় বোন  অপরূপা দেবী। শৈশব জীবনে গ্রামের বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা। তার পর ভর্তি হন তমলুকের 'হ্যামিল্টন' স্কুলে। সেখান থেকে পরে তিনি ভর্তি হোন মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে।

এমন সময় ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বিপ্লবীদের তৈরি একটি নবগঠিত দল যুগান্তরে যোগদান করেন। পরে ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মেদিনীপুরের কলেজিয়েট স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণী পাশ করেন।

পরে ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে দেশে যখন বঙ্গভঙ্গ বিরোধী ও স্বদেশী আন্দোলন চলছিল। সেই আন্দোলন দ্বারা ক্ষুদিরাম প্রভাবিত হন এবং পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে সত্যেন বসুর গুপ্ত সমিতিতে যোগদান করেন। আর এই সমিতিতে থাকা কালীন তিনি শরীরচর্চার পাশাপাশি রাজনৈতিক শিক্ষাও গ্রহণ করতে থাকেন। এই সময় তিনি সশস্ত্র বিপ্লবের জন্য নিজেকে তৈরি করতে থাকে, শেখেন পিস্তল চালনা করাও। আর সেই স্বদেশী আন্দোলনের অঙ্গ  হিসেবে, তিনি ইংল্যাণ্ডে উৎপাদিত কাপড় পোড়ানো ও ইংল্যাণ্ড থেকে আমদানিকৃত লবণ বোঝাই নৌকা ডোবানোর কাজে  অংশ গ্রহণ করেন।

এদিকে ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে মেদিনীপুর শহরে এক কৃষি মেলায় বিপ্লবী পত্রিকা ‘সোনার বাংলা’ বিলি করার সময়, প্রথম পুলিশের হাতে ধরা পড়েন ক্ষুদিরাম। কিন্তু সেখান থেকে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যেতেও সক্ষম হন তিনি। যদিও পরে ওই একই কাজের জন্য পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তিনি। কিন্তু অল্প বয়সের জন্য আদালতে তিনি মুক্তি পান।

অন্যদিকে ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে বিপ্লবীদের গোপন সংস্থায় অর্থের প্রয়োজন হলে, হাটগাছায় ডাক বিভাগের থলি লুট করেন বিপ্লবীরা। ওই বছরেরই ৬ই ডিসেম্বর নারায়ণগড় রেল স্টেশনের কাছে বাংলার ছোটলাটের বিশেষ রেল গাড়িতে বোমা আক্রমণের ঘটনার সাথে তিনি যুক্ত ছিলেন বলেও ধরে নেওয়া হয়।

এদিকে ক্ষুদিরাম স্বদেশী আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকার কারণে, তাঁর জামাইবাবুর সরকারি চাকুরিতে অসুবিধা হচ্ছিল। তাই তিনি অন্য আশ্রয়ে যেতে হয় ক্ষুদিরামকে। সেই সময় তাঁকে আশ্রয় দিয়েছিলেন মেদেনীপুরের উকিল সৈয়দ আব্দুল ওয়াজেদের বোন।

এই সময় বঙ্গভঙ্গ বিরোধী ও স্বদেশী আন্দোলনকারীদের কঠোর সাজা ও দমননীতির শুরু হয়। আর সেই কারণেই কলকাতার প্রধান প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড বিপ্লবীদের কাছে অত্যন্ত ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন।

এদিকে ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে পরে কলকাতার মানিকতলায় মুরারীপুকুরে বারীনকুমার ঘোষের বাগান বাড়িতে একটি সশস্ত্র বিপ্লবী দলটি গঠিত হয়। এই দলটিই পরবর্তী সময়ে 'যুগান্তর বিপ্লবী দল' নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। আর এই যুগান্তর বিপ্লবী দলের পক্ষ থেকে 'কিংসফোর্ড'কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সেই সময় নিরাপত্তার কারণে কিংসফোর্ডকে বিহারের মুজাফরপুরে বদলি করা হয়। আর তাই কিংসফোর্ড'কে হত্যা করার দায়িত্ব এসে পড়ে প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরামের উপর।

১৯০৮ সালের ৩০শে এপ্রিল রাত তখন ৮ টা ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী রাতের অন্ধকারে,  স্থানীয় ইউরোপীয় ক্লাবের গেটের কাছে একটি গাছের আড়াল থেকে অপেক্ষা করছে। কিন্তু তারা কিংসফোর্ডের গাড়ি ভেবে, একটি ঘোড়ার গাড়িতে বোমা নিক্ষেপ করে বসেন ভুল বসত। আর এর ফলে এই গাড়িতে থাকা নিরপরাধ মিসেস কেনেডি ও তার কন্যা মৃত্যুবরণ করেন। ঘটনার সাথে সাথে পুলিশ সমগ্র অঞ্চল জুড়ে তল্লাসি চালাতে থাকে। ক্ষুদিরাম বসু ঘটনা স্থল থেকে প্রায় ২৫ মাইল দূরে ওয়েইনি স্টেশনে ধরা পড়েন। আর অপর বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকীকে পুলিশ ধরার চেষ্টা হলে, তিনি নিজের রিভলবারের গুলিতে আত্মঘাতী হন। তিনি বোমা নিক্ষেপের সমস্ত দায়িত্ব নিজের উপর নিয়ে নেন। এবং শুরু হয় ক্ষুদিরামের বিচার প্রক্রিয়া। বিচারে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয় ক্ষুদিরামকে। আর ফাঁসির আদেশ শুনে ক্ষুদিরাম বসু হাসিমুখে বলেন যে, এ মৃত্যুতে তার বিন্দুমাত্র ভয় নাই।

এদিকে ফাঁসী কার্যকর হবার আগে তাঁর কাছে তার শেষ ইচ্ছা জানতে চাওয়া হলে। তিনি বলেন, তিনি বোমা বানাতে পারেন। অনুমতি দিলে তাতিনি সকলকে শিখিয়ে দিতে পারেন। আর তার দ্বিতীয় ইচ্ছার কথায় তিনি বলেন, তাঁর বোন অরূপাদেবীর সাথে দেখা করতে চান তিনি।

অবশেষে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ আগস্ট মুজাফফরপুর জেলেই ফাঁসি কার্যকর করা হয় ক্ষুদিরাম বসুর। আর সেই সময় তাঁর বয়স ছিল ১৮ বৎসর ৭ মাস ১১দিনের মতো।